সহস্রাধিক মামলায় হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৩-০১-২০২৫ ০৪:১৪:৩৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৩-০১-২০২৫ ০৪:১৪:৩৪ অপরাহ্ন
ফাইল ফটো
চট্টগ্রামে ভূমি, ক্যাটারিং ও নিয়োগ জটিলতাসহ বিভিন্ন ঘটনায় এক হাজার ৪৩৩টি মামলা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। গত ১৫ বছর ধরে এসব মামলা চললেও নানা জটিলতায় নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। কবে নাগাদ এসব মামলা নিষ্পত্তি হবে, তাও জানা নেই রেলওয়ের। উল্টো দিন দিন মামলার সংখ্যা বাড়ছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিস (খাবার সরবরাহ) পরিচালনার জন্য ২০২৩ সালে ঠিকাদার নিয়োগ ও নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে ৪৫ প্রতিষ্ঠান আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে আবেদন জমা দেয় ৪২ প্রতিষ্ঠান। তারা প্রত্যেকে রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা অফেরতযোগ্য অর্থ দিয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে ৩৭ প্রতিষ্ঠানকে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত করে সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে আবেদনকারীদের মধ্যে পাঁচ প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে। এর মধ্যে এক প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলাটি এখনও চলমান। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার ডাকা যাচ্ছে না। মামলাটি রেলওয়ের পক্ষে পরিচালনা করছে আইন শাখা।
শুধু ক্যাটারিং নিয়ে মামলা নয়, ভূমি ও নিয়োগ জটিলতাসহ নানা কারণে দায়ের হওয়া এক হাজার ৪৩৩টি মামলায় লড়ছে পূর্বাঞ্চলের আইন শাখা। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ মামলা ভূমি সংক্রান্ত। তার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৬০, হাইকোর্টে ৫৩২, জজ কোর্টে ৭৬৭, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ৭৪টি মামলা রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য মামলা রয়েছে ঢাকার জজ আদালতে ২৫৪টি, নরসিংদী জজ আদালতে পাঁচটি, নারায়ণগঞ্জ জজ আদালতে ৫১টি, গাজীপুর জজ আদালতে ছয়টি, চট্টগ্রাম জজ আদালতে ৯২টি, সাতকানিয়া জজ আদালতে ১৭টি, পটিয়া জজ আদালতে ২৭টি, নোয়াখালী জজ আদালতে ২৩টি, কুমিল্লা জজ আদালতে ৩০টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ আদালতে ৫৯টি, ফেনী জজ আদালতে আটটি, চাঁদপুর জজ আদালতে ১৮টি, ময়মনসিংহ জজ আদালতে নয়টি, কিশোরগঞ্জ জজ আদালতে পাঁচটি, নেত্রকোনা জজ আদালতে চারটি, সিলেট জজ আদালতে ৫৮টি, বাজিতপুর জজ আদালতে সাতটি, জামালপুর জজ আদালতে নয়টি, টাঙ্গাইল জজ আদালতে একটি, সরিষাবাড়ী জজ আদালতে দুটি। পাশাপাশি মাসে ৮ থেকে ১০টি মামলা দায়ের হলেও নিষ্পতি হচ্ছে এক-দুটি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মামুন মিয়া বলেন, ‘মামলার কারণে নতুন করে ক্যাটারিং সার্ভিস নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। মামলা শেষ হলে টেন্ডারে যেতে পারবো।’
মামলা কম নিষ্পত্তি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আইন কর্মকর্তা মো. আল মাহমুদ বলেন, ‘রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আইন শাখায় জনবল সংকট অনেক বেশি। এখানে দুজন আইন কর্মকর্তার মধ্যে আমি একজন। অন্যান্য পদেও জনবলের চরম সংকট আছে। মামলা পরিচালনায় অর্থ বরাদ্দ খুবই কম। এ কারণে মামলাগুলো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। মামলা পরিচালনার জন্য চট্টগ্রামে তিন জন এবং অন্যান্য জেলায় একজন করে আইনজীবী রয়েছেন। কিন্তু কিছুইতেই মামলার জট কমছে না।’
পূর্বাঞ্চল রেলের এক হাজার ৪৩৩টি মামলা চলমান রয়েছে উল্লেখ করে আল মাহমুদ বলেন, ‘এর মধ্যে ৮০ শতাংশ জমি সংক্রান্ত। বাকিগুলো ক্যাটারিং ও নিয়োগ সংক্রান্ত। ২০০৯-১০ সালের মামলাও পড়ে আছে। তবে ২০১৪-২০১৫ সালের মামলা বেশি। প্রতি মাসেই মামলা হচ্ছে। কোনও মাসে দুটি আবার কোনও মাসে ১০টিও হচ্ছে। যে হারে মামলা হচ্ছে সে হারে নিষ্পত্তি হয় না। কোনও কোনও মাসে দেখা যায়, একটিও নিষ্পত্তি হয় না। এ কারণে মামলা বেড়ে গেছে। আইনজীবীদের মাধ্যমে মামলাগুলো পরিচালনা করছি আমরা।’
মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আইন কর্মকর্তা আল মাহমুদ আরও বলেন, ‘কেউ যদি উচ্চ আদালতে মামলা করেন সেটির নোটিশ আমাদের কাছে পৌঁছাতে ছয় মাস থেকে এক বছর লেগে যায়। নোটিশ পাওয়ার পর ওই মামলার জবাব দেওয়া হয়। আবার কোনও কোনও বাদী আদালত থেকে এক-দুবার সময় নিয়ে থাকেন। আমরাও সময় নিয়ে থাকি। দেখা যায় অনেক ধার্য তারিখে আদালত বসে না। এসব কারণে মামলাগুলো দীর্ঘায়িত হয়।’
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স